রাণী কতক্ষণ সুমনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। সে জানতে চাইল, এই ডিসিশনটা কি তুমি নিয়েই নিয়েছ?
সুমন হাসি মুখে মাথা ঝাঁকাল, জ্বি ম্যাডাম, নিয়েই নিয়েছি। বহু ভেবেচিন্তে…।
রাণী হতাশ গলায় বলল, এটা তোমার একটা বাজে সিদ্ধান্ত।
সুমন হাসল, পরে তুমি দেখবে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না।
সুমনের চাকুরিটা রাণীর খুবই অপছন্দের। সপ্তাহে ছদিন তার রাতে ডিউটি, একদিন ছুটি। রাণী বলে, ওই একটা রাত তোমাকে ছাড় দিয়েছে কেন বল তো! একটা রাত বাসায় থাকতে হয় বলে তোমার নিজেরও কি অস্বস্তি লাগে না?
কিছু অবশ্য করার নেই। কারণ এ চাকুরি ছেড়ে অন্য একটা জুটিয়ে নেবে, তা মোটেই সহজ নয়। একটা অবশ্যই সান্ত্বনা আছে তাদের সামনে, এভাবে ছমাস গেছে, আরও যদি বছর দেড়েক চালিয়ে নেওয়া যায়, সুমনের চাকুরি তখন দিনে হবে। এটা অবশ্য খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারে না রাণীকে। সে বলে, বুঝলাম। কিন্তু বাকি দেড় বছরের এতগুলো রাত একা একা আমার কাটবে কী করে? সুমন, তুমি কি বুঝতে পারো রাতের পর রাত কী অসহ্য এই একা থাকা?
সুমন মাথা চুলকোয়, তোমার অবস্থাটা আমি বুঝতে পারি না, তা নয়; কিন্তু রাণী…।
রাণী বলে, একা বাসায় আমি ভয়ে সিটিয়ে থাকি জানো? ভয়ে আমার ঘুম আসে না।
রাতের পর রাত একা একা বাসায় থাকা ভয়েরই ব্যাপার বটে। এ এলাকাটা ভালো নয়। সুমন খেয়াল করেছে, পাড়ার ছেলেরা কেমন কেমন করে তাকায়। বাড়িঅলা লোকটা অবশ্য খুব ভালো। সুমনকে বলেছে, আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। আমাদের কোলাপসিবল গেট রাত এগারোটায় বন্ধ হয়ে যায়, আর আমি তো পাশের ফ্ল্যাটেই…। রাণী হচ্ছে আমার মেয়ের মতো, ওকে আমি দেখব।
বাড়িঅলার এই কথা সুমনের জন্য যতটা স্বস্তির, রাণীর জন্য ততটা নয়। সে বলে, বেশ, দেখবেন তিনি, ঠিক আছে। কিন্তু বাড়ির ভেতর ভয়ে যে আমি বিছানা ছেড়ে নামতে পারি না, তার কী হবে?
এই ভয়ের ব্যাপারটা এমন বড় হয়ে ওঠে, সুমন একদিন বলে, বেশ কিছুদিন ধরে এটা আমি ভাবছি রাণী, শেষে আমি কী ঠিক করেছি জানো?
সুমন যা ঠিক করেছে বলে জানায়, তা রাণীর পছন্দ হয় না। সে দুপাশে মাথা নাড়ে, বারবার বলে, এতে কাজের কাজ কিছুই হবে না, বরং ঝামেলা বাড়বে। সুমন অবশ্য নাছোড়বান্দাই, শেষে সে বলে, ঠিক আছে, একটা ট্রায়াল দিয়েই দেখা যাক।
এরপর কাইজার নামের ছেলেটা সুমনদের ফ্ল্যাটে থাকতে আরম্ভ করে। সাবলেট। ব্যবস্থাটা অবশ্য একটু অন্যরকম। কাইজার সুমনদের অফিসে চাকুরি করে, তারপর কী কী পড়াশোনাও আছে তার, তার শুধু রাতে একটু থাকার জায়গা দরকার। সুমন রাণীকে জানায় কাইজার ছেলেটাই তাকে বারবার অনুরোধ করেছিল রাতে একটা থাকার জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে, তখন সুমনের হঠাৎই খেয়াল হয় এরকম একটা ব্যবস্থা করা যায়।
সুমন রাণীকে বলে, তুমি একটুও চিন্তা করবে না। ছেলেটাকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি। যেমন ভদ্র তেমন বিনয়ী। তুমি নিজেই বুঝবে। আমি একমাস পর তোমার কাছে জানতে চাইব সিদ্ধান্তটা আমি ভুল নিয়েছি কি না।
একমাস পর সুমন যখন জানতে চায়, রাণী তখন বলে, সবই ঠিক আছে সুমন, ওই ছেলের সঙ্গে আমার দেখাও হয় না। কিন্তু…।
কিন্তু তোমার ভয় তো কেটেছে, কাটেনি বলো?
একা থাকার ভয় আমার কেটেছ কিছুটা। কিন্তু সুমন, অন্য একটা ভয়…। রাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায়, মনে হয় পাশের ঘরে অপরিচিত এক পুরুষ, আর আমি একদম একা…।
সুমন হাসতে আরম্ভ করে, তোমাকে এই ভয় একটুও পেতে হবে না রাণী। তোমাকে বলেছি ছেলেটা ভদ্র। কতটা ভদ্র, আরও কিছুদিন গেলেই সেটা তুমি নিজেই টের পাবে।
আরও কিছুদিন পর রাণী বলে, সুমন, এই ছেলেটাকে এভাবে রেখেই দেবে বলে ঠিক করেছ?
সুমন মাথা ঝাঁকায়, অন্তত আমার রাতের ডিউটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
রাণী হতাশ গলায় বলে, তুমি আমার সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করছ না।
সুমনের ভুরু কুঁচকে যায়, তোমার সমস্যা? ছেলেটা কোনওরকম বেয়াদপি করেছে?
না না, তা না। ছেলেটা, তুমি যা বলেছ ঠিকই আছে, খুব ভদ্রই হবে। কিন্তু আমি যে আমার অস্বস্তি কাটাতে পারি না।
এই ছেলেকে নিয়ে তোমার কোনও অস্বস্তি থাকা উচিত নয়। সুমন হাসতে হাসতে বলে।
তুমি যদি আমার জায়গায় থাকতে, তবে বুঝতে। রাণী রাগ রাগ গলায় বলে। তাছাড়া…।
তাছাড়া কী? খুব যেন মজা হচ্ছে, এমন ভঙ্গিতে সুমন রাণীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
কী লাভ বলে! বললে তুমি হেসে উড়িয়ে দেবে। সুমন, দুর্ঘটনার কথা কেউ বলতে পারে না।
আমি তোমাকে একটা কথা বলি তাহলে। সুমনকে কিছুটা গম্ভীর দ্যাখায়। এই ছেলেকে নিয়ে আমি ওই আশংকাও করি না। রাণী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হতাশ গলায় বলে, সুমন, আমি দুর্ঘটনার কথা বলছিলাম। ওটা ভেবেচিন্তে হয় না, ওটা যখন-তখন হয়ে যেতে পারে।
সুমন হাসতে হাসতে বলে, দুর্ঘটনা যে ঘটাবে, ও ছেলের সেই সুযোগ কোথায়?
*** *** *** *** ***
এভাবে আরও কিছুদিন পার হয়ে যায়। তারপর একরাতে কাইজারের দরজায় গিয়ে আঘাত করে রাণী। কাইজারকে সে নিয়ে আসে নিজের ঘরে। বিস্মিত ও হতভম্ব কাইজার নিজেকে সামলাতে পারে না। তবে অস্ফুট গলায় বলে, সুমন ভাই যদি এসে পড়ে!
আসবে না। রাণী বলে, তাছাড়া জানে ও, ওকে আমি বলেছি। একথা শুনে কাইজার উঠে বসে, কী? কী বলেছেন আপনি সুমন ভাইকে?
সেটা তোমার না জানলেও চলবে। রাণী মৃদু গলায় বলে। ওকে আমি দুর্ঘটনার কথা বলেছি। বলেছি, দুর্ঘটনার কথা কেউ বলতে পারে না।
কাইজার অবাক চোখে রাণীর দিকে তাকিয়ে থাকে। রাণী একটু হাসার চেষ্টা করে, তবে তাকে ম্লান ও বিমর্ষ দেখায়। ক্লান্ত গলায় সে বলে, ও অবশ্য আমার কথা বিশ্বাস করেনি।
সুমন হাসি মুখে মাথা ঝাঁকাল, জ্বি ম্যাডাম, নিয়েই নিয়েছি। বহু ভেবেচিন্তে…।
রাণী হতাশ গলায় বলল, এটা তোমার একটা বাজে সিদ্ধান্ত।
সুমন হাসল, পরে তুমি দেখবে এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না।
সুমনের চাকুরিটা রাণীর খুবই অপছন্দের। সপ্তাহে ছদিন তার রাতে ডিউটি, একদিন ছুটি। রাণী বলে, ওই একটা রাত তোমাকে ছাড় দিয়েছে কেন বল তো! একটা রাত বাসায় থাকতে হয় বলে তোমার নিজেরও কি অস্বস্তি লাগে না?
কিছু অবশ্য করার নেই। কারণ এ চাকুরি ছেড়ে অন্য একটা জুটিয়ে নেবে, তা মোটেই সহজ নয়। একটা অবশ্যই সান্ত্বনা আছে তাদের সামনে, এভাবে ছমাস গেছে, আরও যদি বছর দেড়েক চালিয়ে নেওয়া যায়, সুমনের চাকুরি তখন দিনে হবে। এটা অবশ্য খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারে না রাণীকে। সে বলে, বুঝলাম। কিন্তু বাকি দেড় বছরের এতগুলো রাত একা একা আমার কাটবে কী করে? সুমন, তুমি কি বুঝতে পারো রাতের পর রাত কী অসহ্য এই একা থাকা?
সুমন মাথা চুলকোয়, তোমার অবস্থাটা আমি বুঝতে পারি না, তা নয়; কিন্তু রাণী…।
রাণী বলে, একা বাসায় আমি ভয়ে সিটিয়ে থাকি জানো? ভয়ে আমার ঘুম আসে না।
রাতের পর রাত একা একা বাসায় থাকা ভয়েরই ব্যাপার বটে। এ এলাকাটা ভালো নয়। সুমন খেয়াল করেছে, পাড়ার ছেলেরা কেমন কেমন করে তাকায়। বাড়িঅলা লোকটা অবশ্য খুব ভালো। সুমনকে বলেছে, আপনি কিছু চিন্তা করবেন না। আমাদের কোলাপসিবল গেট রাত এগারোটায় বন্ধ হয়ে যায়, আর আমি তো পাশের ফ্ল্যাটেই…। রাণী হচ্ছে আমার মেয়ের মতো, ওকে আমি দেখব।
বাড়িঅলার এই কথা সুমনের জন্য যতটা স্বস্তির, রাণীর জন্য ততটা নয়। সে বলে, বেশ, দেখবেন তিনি, ঠিক আছে। কিন্তু বাড়ির ভেতর ভয়ে যে আমি বিছানা ছেড়ে নামতে পারি না, তার কী হবে?
এই ভয়ের ব্যাপারটা এমন বড় হয়ে ওঠে, সুমন একদিন বলে, বেশ কিছুদিন ধরে এটা আমি ভাবছি রাণী, শেষে আমি কী ঠিক করেছি জানো?
সুমন যা ঠিক করেছে বলে জানায়, তা রাণীর পছন্দ হয় না। সে দুপাশে মাথা নাড়ে, বারবার বলে, এতে কাজের কাজ কিছুই হবে না, বরং ঝামেলা বাড়বে। সুমন অবশ্য নাছোড়বান্দাই, শেষে সে বলে, ঠিক আছে, একটা ট্রায়াল দিয়েই দেখা যাক।
এরপর কাইজার নামের ছেলেটা সুমনদের ফ্ল্যাটে থাকতে আরম্ভ করে। সাবলেট। ব্যবস্থাটা অবশ্য একটু অন্যরকম। কাইজার সুমনদের অফিসে চাকুরি করে, তারপর কী কী পড়াশোনাও আছে তার, তার শুধু রাতে একটু থাকার জায়গা দরকার। সুমন রাণীকে জানায় কাইজার ছেলেটাই তাকে বারবার অনুরোধ করেছিল রাতে একটা থাকার জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে, তখন সুমনের হঠাৎই খেয়াল হয় এরকম একটা ব্যবস্থা করা যায়।
সুমন রাণীকে বলে, তুমি একটুও চিন্তা করবে না। ছেলেটাকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি। যেমন ভদ্র তেমন বিনয়ী। তুমি নিজেই বুঝবে। আমি একমাস পর তোমার কাছে জানতে চাইব সিদ্ধান্তটা আমি ভুল নিয়েছি কি না।
একমাস পর সুমন যখন জানতে চায়, রাণী তখন বলে, সবই ঠিক আছে সুমন, ওই ছেলের সঙ্গে আমার দেখাও হয় না। কিন্তু…।
কিন্তু তোমার ভয় তো কেটেছে, কাটেনি বলো?
একা থাকার ভয় আমার কেটেছ কিছুটা। কিন্তু সুমন, অন্য একটা ভয়…। রাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায়, মনে হয় পাশের ঘরে অপরিচিত এক পুরুষ, আর আমি একদম একা…।
সুমন হাসতে আরম্ভ করে, তোমাকে এই ভয় একটুও পেতে হবে না রাণী। তোমাকে বলেছি ছেলেটা ভদ্র। কতটা ভদ্র, আরও কিছুদিন গেলেই সেটা তুমি নিজেই টের পাবে।
আরও কিছুদিন পর রাণী বলে, সুমন, এই ছেলেটাকে এভাবে রেখেই দেবে বলে ঠিক করেছ?
সুমন মাথা ঝাঁকায়, অন্তত আমার রাতের ডিউটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
রাণী হতাশ গলায় বলে, তুমি আমার সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করছ না।
সুমনের ভুরু কুঁচকে যায়, তোমার সমস্যা? ছেলেটা কোনওরকম বেয়াদপি করেছে?
না না, তা না। ছেলেটা, তুমি যা বলেছ ঠিকই আছে, খুব ভদ্রই হবে। কিন্তু আমি যে আমার অস্বস্তি কাটাতে পারি না।
এই ছেলেকে নিয়ে তোমার কোনও অস্বস্তি থাকা উচিত নয়। সুমন হাসতে হাসতে বলে।
তুমি যদি আমার জায়গায় থাকতে, তবে বুঝতে। রাণী রাগ রাগ গলায় বলে। তাছাড়া…।
তাছাড়া কী? খুব যেন মজা হচ্ছে, এমন ভঙ্গিতে সুমন রাণীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
কী লাভ বলে! বললে তুমি হেসে উড়িয়ে দেবে। সুমন, দুর্ঘটনার কথা কেউ বলতে পারে না।
আমি তোমাকে একটা কথা বলি তাহলে। সুমনকে কিছুটা গম্ভীর দ্যাখায়। এই ছেলেকে নিয়ে আমি ওই আশংকাও করি না। রাণী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হতাশ গলায় বলে, সুমন, আমি দুর্ঘটনার কথা বলছিলাম। ওটা ভেবেচিন্তে হয় না, ওটা যখন-তখন হয়ে যেতে পারে।
সুমন হাসতে হাসতে বলে, দুর্ঘটনা যে ঘটাবে, ও ছেলের সেই সুযোগ কোথায়?
*** *** *** *** ***
এভাবে আরও কিছুদিন পার হয়ে যায়। তারপর একরাতে কাইজারের দরজায় গিয়ে আঘাত করে রাণী। কাইজারকে সে নিয়ে আসে নিজের ঘরে। বিস্মিত ও হতভম্ব কাইজার নিজেকে সামলাতে পারে না। তবে অস্ফুট গলায় বলে, সুমন ভাই যদি এসে পড়ে!
আসবে না। রাণী বলে, তাছাড়া জানে ও, ওকে আমি বলেছি। একথা শুনে কাইজার উঠে বসে, কী? কী বলেছেন আপনি সুমন ভাইকে?
সেটা তোমার না জানলেও চলবে। রাণী মৃদু গলায় বলে। ওকে আমি দুর্ঘটনার কথা বলেছি। বলেছি, দুর্ঘটনার কথা কেউ বলতে পারে না।
কাইজার অবাক চোখে রাণীর দিকে তাকিয়ে থাকে। রাণী একটু হাসার চেষ্টা করে, তবে তাকে ম্লান ও বিমর্ষ দেখায়। ক্লান্ত গলায় সে বলে, ও অবশ্য আমার কথা বিশ্বাস করেনি।
No comments:
Post a Comment