ন’টা থেকে বসে আছে অন্তু, ঘড়ি দেখছে হয়তো মিনিটে ষাটবারের বেশী। মিলা আসার কথা। দেড়ঘন্টা হয়ে গেল, কোন দেখা নেই। আজ শুক্রবার। রাস্তায় জ্যাম থাকার কথা নয়। মেয়েটা কথা দিয়ে কথা রাখেনা। এই একটাই সমস্যা, তা না হলে মিলার মত চমৎকার মেয়ে হয়না। খুব লাস্যময়ী সে, সারাক্ষন হাসে, আবার একটু শাসন করলে গালটা আপেলের মত ফুলিয়ে ফেলে। একটু আদর করে দিলেই আবার রাগটা পড়ে যায়। সে একদন্ড স্থির থাকতে পারেনা। অন্তু অনেক চেষ্টা করে দেখেছে, পারেনা। একদিন ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল – চুপ, একদম চুপ। নেক্সট দুটা মিনিট চুপ করে আমার বুকে শুয়ে থাক। একটা কথাও বলবেনা, হাসবেনা, কিচ্ছু না। আচ্ছা বলে দম নিয়ে সে শুরু করল, কিন্তু কোথায় কি? ২০ সেকেন্ড পরই একটা চিমটি কাটল পিঠে। চোখ গরম দেখায় অন্তু, তখন মেকি চুপ করে আবার হাসা শুরু করে দেয়। চেষ্টা করেছিল একটু আবেগটা বোঝানোর জন্য। কিন্ত পাজী মেয়েটাকে বাগে মানানোই দায়।
পাড়ার ছেলেগুলো আসার সময় আবার ডিসটার্ব করছে না তো? ধুর! এমন তো কখনো হয়না। আগেও কত এসেছে না মিলা এই জায়গাটায়। প্রতিদিনই ১৫ মিনিট থেকে আধ ঘন্টা দেরী করেছে, কিন্তু আজকের মত এতো নয়। মিলার উপর চড়াও মেজাজটা এখন বরং চিন্তিতই হয়ে যাচ্ছে। অন্তু এখন বসে আছে তার দোকানে। চাকরী খোঁজার পাশাপাশি এই কম্পিউটার এক্সেসরিজের দোকানটা চালায় সে। শুক্রবার দোকান বন্ধের দিন। কিন্তু অনেক শুক্রবারেই সে এটা খোলে, শুধু নিজে আসে। বাইরের ঝাঁপিগুলো বন্ধ থাকে, ছোট্ট একটা গেট ছাড়া। মিলা সেখান দিয়ে ঢুকেই একটা ভুবন ভুলানো হাসি দেয়, যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু আজ হাসিতে ভুললে চলবেনা। কঠিন একটা ঝারি দিতে হবে।
খুট করে শব্দ হল। কাকভেজা একটা মেয়ে ঢুকল, তার হাতে কিছু ফুল। অন্তুর দিকে তাকিয়ে সেই হাসিটা দিল সে।
- থামো, এতো দেরি হল কেন তোমার?
- আমার কি দোষ? বাইরে এত বৃষ্টি! তোমার জন্য ফুল কিনতে নামলাম, তখনি বৃষ্টি এলো। এরপর কতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম… একটা রিকশা, সি এন জি কিচ্ছু পাইনা, তো?
- এদিকে আমি চিন্তা করতে করতে অস্থির…
- আমি কি করব বলো?
- আমি কি করব মানে? তোমার ফোন বন্ধ ছিল কেন?
- আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই বন্ধ…
অন্তু একটা ধমক দিল। মিলা চুপ মেরে গেল।
- প্লিজ, মাইন্ড করোনা। আমি তো চলেই এসেছি। কত কষ্ট করে তোমার জন্য বৃষ্টির মধ্যে আসলাম।
- তুমি কখনো কথা দিয়ে কথা রাখোনা। অপেক্ষা করিয়ে রেখে মজা পাও। কাল রাতে কত কথা শুনালাম, কোন চেঞ্জ নাই।
কাল রাতে ওদের মধ্যে বেশ ঝগড়া হয়েছে। কাজেই আজকের দিনটা একটু ক্রুশাল ছিল। শেষ পর্যন্ত ঝগড়া দিয়েই শুরু হল।
“অন্তু, মাইন্ড করোনা প্লিজ” বলতে বলতে এগিয়ে এলো। “আচ্ছা, ঠিক আছে। আমাকে একটা থাপ্পড় দিয়ে দাও।”
“তুমি এখনো ফাজলামি করছ।”
মিলা এসে অন্তুর ঘাড়ে হাত রাখল, পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে চুমু খেল ঠোঁটে। “স্যার, মাফ করে দেন স্যার। আমার ভুল হয়ে গেছে, আমাকে একটা থাপ্পড় দেন।”
মিলার গায়ে একটা গন্ধ আছে, যেটা কেবলই অন্তু পায়। সেই গন্ধটা খুব প্রকট লাগল। অন্তুর ধারণা সে চোখ বন্ধ করে থাকলেও যদি মিলা আশে পাশে থাকে তাহলে এই গন্ধ থেকে জেনে যেবে যে মেয়েটা কাছেই আছে। মিলা চোখে চোখে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। “আমার ঠান্ডা লেগে যাবে। তোমার শার্টটা দাও।” বলে সেই বোতাম খোলা শুরু করে দিল। মুখে দুষ্টুমি হাসি। মেয়েটা অন্তুকে ভালবাসার চেয়ে মায়ায় বেশী জড়িয়ে রেখেছে। এখনি মায়াবোধটা বাড়ল। ইচ্ছে করছিল চেপে ধরে জোরসে একটা চুমু দেয়। কিন্তু আগে কোনদিন করেনি এবং এইমাত্র ঘটে যাওয়া ছোট্ট অভিমানের কারনে করা গেলনা।
গা থেকে শার্টটা খুলে নিয়ে কাঁধব্যাগটা টেবিলে রাখল, ফুলটা রাখলনা।
এই দোকানের কোনায় পুরোটাই কাঁচে ঘেরা একটা ছোট্ট রুম আছে, যেখানে কম্পিউটার মেরামত করা হয়। সেদিকে এগোল সে। “উলটো ঘুরে থাক। তাকাবেনা কিন্তু।”
অন্তু মনে হল বুঝতে পারেনি কিছু, হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকল। “কি হল?” তাড়া দিল মিলা, “ওদিকে ফিরো। এদিকে তাকালে কিন্তু আম্মুকে ডাকব, হ্যাঁ?”
এবার কিছুটা বুঝতে পারল। ঘুরল ছেলেটা। মিলা কাঁচের ঘরে ঢুকে দরজা আটকাল। সবই কাঁচের, সব বাইরে থেকে দেখা যায়। মিলা পুলিশের মত সন্তর্পন চোখে অন্তুকে খেয়াল রাখছে। একে একে কাপড় ছাড়তে শুরু করল মিলা। ভিজে থাকা কাপড় শরীর কামড়ে আছে, ছাড়িয়ে নেবার সময় ছড় ছড় আওয়াজ করছে।
অন্তুর কাছে মূহূর্তগুলো দীর্ঘতর ঠেকল। কোন মেয়ে যদি নগ্ন হতে থাকে, আর পুরুষটাকে বলে চেয়োনা; কোনসে পুরুষ আছে পারবে? অন্তত নিজেকে সেরকম ঠেকলনা অন্তুর। এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনে ফিরল সে, কাঁচের ছোট্ট বাড়িটার দিকে। মিলা তখন পাজামাটা খুলে পা থেকে সরিয়ে কেবল ঝোঁকে থাকা থেকে উঠছে। উঠে চোখ পড়তেই চমকে উঠল। “আম্মু…” বলে চিৎকার দিয়ে টেবিলে রাখা ফুলটা নিয়ে যৌনাঙ্গটা ঢাকল, আরেক হাতে স্তনদুটো ঢাকার চেষ্টা করল।
এখন পৃথিবীটা কেবলই স্থির। অন্তুর দেহে পেন্সিল ব্যাটারীর মত মৃদু একটু প্রাণ আছে যেন। সেই মৃদু সত্ত্বা দিয়ে অনুভব করল তার সামনে একটা নগ্ন নারীদেহ, যার যৌনাঙ্গ ফুল দিয়ে আবৃত, বুকের লজ্জা ঢাকার ব্যার্থ চেষ্টায় ব্যাস্ত একটা পূজ্য কুমারী। সময় খুবই ধীর, কুমারী কিছু উচ্চস্বরে বলে চলেছে। মৃদুপ্রান নিয়ে তা কি উপলব্ধি করা যায়? একটা কথাও কানে যাচ্ছেনা অন্তুর। কখন যে কাঁচের বাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল কার প্রেরনায় কিছুই বলতে পারবেনা। বদ্ধ কাঁচের ঘরে শ্বাসজীবী প্রানী ছেড়ে দিলে কিছুক্ষন পর যেমন শ্বাসকষ্টে দেয়ালের গায়ে সেঁটে যায় বাইরের বায়ুমন্ডিত জগৎটাকে পাবার আশায়, অন্তু ঠিক তাই করছিল। মিলা উল্টো ঘুরেছে, দৃশ্য পুনস্থাপিত করার আশায় দেয়াল ঘষটে অন্তুও চলে এলো অন্য পাশে। মিলা অবশেষে ফুল ছুঁড়ে মারল।
সম্বিৎ ফিরে আসল ঝাড়া দিয়ে। “মিলা একটু ঢুকতে দাও।”
‘না, কি বল?’ একবার ফুঁপিয়ে আবার সাহায্যের আশায় ডাকল, ‘আম্মু…’
- কিছু করবনা, একবার শুধু ঢুকতে দাও।
- না, পাগল হয়ে গেছ? যাও এখান থেকে।
- যাবনা। …ঢুকতে দিবেনা?
- না!
এবার জোরে চিৎকার দিল মিলা। গা থেকে হাত সরিয়ে শার্টটা ঝটপট পড়তে চেষ্টা করল। কিন্তু পারছেনা, সে কাঁপছে।
- আমি কিন্তু গ্লাস ভেঙে ফেলব।
মিলা মেয়েলী ফুঁপানো শুরু করল। “খোল, নাহলে কিন্তু আমি সত্যি তাই করব।” অন্তু হুমকি দিল। উত্তরে মিলা বোকা মেয়ের মত জিজ্ঞেস করল “কেন?”
এর উত্তর কি আসলেই অন্তু জানে? না। তাহলে কেন এমন করছে? দুঃখিত, এই বিবেক কিন্তু অন্তুর মাঝে কাজ করলনা। সে ভাবল, কাঁচটা কিভাবে ভাঙা যায়। একটা পেপারওয়েট দেখতে পেল সে নিজের টেবিলের উপরে। নিয়ে এসে আরেকবার হুমকির পুনরাবৃত্তি করল। মিলাও তার সিদ্ধান্তে অনড়। কাজেই অন্তু একটু দূর থেকে পেপারওয়েট মেরে কাঁচটা ঝন ঝন শব্দে ভেঙে ফেলল। পেপারওয়েটটা কাঁচ ভাঙার কাজ সেরে মিলার খুব কাছে গিয়ে আঘাত করল, ভয় লেগেছে মেয়েটার। সেটা থেকে দৃষ্টি সরাতেই দেখল অন্তু এগিয়ে আসছে, তবে অন্যদিনের অন্তু নয়। এর মাঝে যেন একটা দানব দেখতে পাচ্ছে সে। যদিও মেনে নিতে ইচ্ছে হলনা, হয়তো কিছুক্ষন খুনসুটি করবে…
কিন্তু না, অন্তুর চোয়াল দেখি ক্রমেই জোরাল হচ্ছে। মিলার অন্তরে ভয় ঢুকে গেল এবার। সে পেছনে আরো চেপে গেল, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। শার্টটা সে অর্ধেক পড়তে পেরেছিল, সেটাই যেন এখন অবলম্বন। ভয়ে মেয়েটা ম্লান হয়ে শার্টটাকেই আঁকড়ে ধরল।
অন্তু এসেই খপ করে হাত দুট ধরে ফেলল। উঁচিয়ে নিয়ে সেগুলোও দেয়ালের সাথে সেঁটে দিল। এবার তার ঠোঁটগুলো এগিয়ে আসছে। মিলা থরথর করে কাঁপছে। কথা বেরুচ্ছেনা, মৃদু শব্দে কিছু বলছে সে। কে জানে হয়তো অন্তুকে থামতে বলছে অথবা প্রার্থনা করছে। অন্তু মিলার ঠোঁটে ঠোঁট মেলাল। স্বভাবতই সে ঠোঁটে সারা নেই। এমনিতে মিলার ঠোঁটদুটো সবসময়ই ভিজে থাকে, চিক চিক করে। হাসলে যেন সকাল ভেঙে আসে। কিছুক্ষন আগে সেই ঠোঁট থেকে প্রান চলে গেছে।
ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করছে, কিন্তু একটা দানবে রূপ নেয়া পুরুষের কাছে কি নম্র কোন কুমারী পারে? নানা সময়ে দেয়া অন্তুর নামগুলো ধরে মিলা অনুনয় শুরু করল। “আমার লক্ষী ছেলে, আমার রাখাল ছেলে, সোনা, প্লিজ ছাড়ো আমাকে। প্লিজ…” মেয়েটা তার আত্মসম্মানের সর্বনিম্নে চলে এসেছে তবুও অন্তুর বিকার নেই। এতো নিচে একটা মেয়ের আত্মসম্মান নামতে দেয়া দুর্বৃত্তেরও সাজেনা।
মিলা চুমুতে একটু সাড়া দিয়ে আবার অনুনয় করে চেষ্টা করল। কাজ হলনা। অন্তু কিছু শুনছে বলে মনে হলনা। মিলা এই পৃথিবীতে চরম অসহায় আর দুর্ভাগা জ্ঞান করল নিজেকে। চোখ ফেটে পানি বেড়িয়ে এলো তার। নীরব কান্না যা মেয়েরা কদাচিৎ কাঁদে।
গায়ের জোর একত্র করেও আর সে পারছেনা। মিলার ঘাড়ে যখন অন্তু চুমু খাচ্ছে, মূহূর্তের জন্য ডানহাতটা ছাড়ল সে। সে সুযোগেই অসহায়িনী একটা জোর থাপ্পড় বসিয়ে দিল। ব্যাঘ্রস্বরূপ ছেলেটা আরো ক্ষেপে গিয়ে দ্বিগুন জোরসে ঠেসে ধরল।
বুক দিয়ে চেপে রেখে হাত মুক্ত করে মেয়েটার যোনিবন্ধনী খুলে ফেলল সে, ছুঁড়ে ফেলল দূরে। মেয়েটার সমস্ত শরীরে বিপরীতার্থক প্রতিক্রিয়া। নিঃশব্দ কান্না অসহায়ত্বের সঙ্গী হলনা, কেবল বাড়িয়ে দিল আরো। এমন প্রেষণাময় মূহূর্তে অনুভব করল পুরুষ সঙ্গীর শক্ত যৌনাঙ্গ। পথ খুঁজে নিচ্ছে মিলার দেহে। “এ অন্যায়!” ভাবল মিলা, ভাবনাটা তার মনে বার বার প্রতিধ্বনিত হয়ে বাজতে লাগে – এ অন্যায়, এ অন্যায়… একটা মেয়ের অধিকার আছে যৌনক্রিয়ার পূর্বে উত্তেজিত হয়ে নেবার, সে দায়িত্ব সঙ্গীর। অবশ্য বলাই বাহুল্য, মিলার বহু পরিচিত সেই সঙ্গী আর সঙ্গী নয়; এ এক ধর্ষক!
সশব্দে কেঁদে উঠল মেয়েটা, অন্তুর পুরুষত্ব জোরপূর্বক পথ খুজে নিয়েছে। একটা মেয়ের কাছে এটা খুবই কাম্য, কিন্তু তাতে থাকতে হয় অগাধ ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর আদর। একটা ধর্ষকের কাছে এসবের কোন মূল্য নেই, মানে নেই। মিলার কান্না আর্তচিৎকারে পৌঁছুল। কেউ নেই উদ্ধার করার, ধর্ষকের ভেতরের বিবেকটাও ঘুমিয়ে আছে।
ধর্ষকের কাঁধে প্রচন্ড জোরে কামড় বসাল অসহায়িনী। চিৎকার দিয়ে সরে গেল পিশাচটা। পরমূহূর্তেই ছুটে এলো। চুল ধরে খুব বিশ্রীভাবে হেঁচরে মেঝেতে ফেলল। কপাল ঠুকে যাওয়ায় ব্যাথা পেয়েছে মিলা। উপুর হয়ে পড়েছে। ব্যাথার আক্রমনে ছুটে যাওয়া দমটা ফিরে পেতেই শরীরের উপর এসে পড়ল পিশাচ। এবার আরো বেকায়দায় চেপে ধরল মেঝেতে, মিলার একবিন্দু নড়ার ক্ষমতা নেই। ফুটন্ত কড়াই থেকে ছিটে জ্বলন্ত উনুনে পড়ল যেন।
আবার প্রচন্ড ব্যাথাময় প্রবেশ অনুভব করল মেয়েটা। গলা ফেড়ে আওয়াজ বের হতে যাচ্ছিল, দানবটা তার লোমশ হাত মুখের উপর চেপে ধরল। এমন একটা অবস্থায় পড়ার আগে মেয়েদের মৃত্যুই কাম্য। কিন্তু এত কাঙ্ক্ষিত মৃত্যু নিশ্চই আসবেনা। পুরনো কোন পাপের প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে নিশ্চয়ই। নাকি সবই তার নিজের ভুলে?
* * *
তার ছোট্ট শরীরটার উপর দিয়ে ঝড়- ঝাপটা যখন থেমেছে তখন বাইরেও বৃষ্টি থেমেছে। মিলার গায়ে কোন জোর নেই, নিথর পড়ে আছে। কোন অনুভূতি নেই, বেঁচে থাকার তাগিদ নেই। আছে এক ধরনের জড়তা, আর আছে তার দেহের উপর নিঃসার এক ধর্ষক। যে কিনা আমেজ লাভ করে এখন খুব আদর দেখাচ্ছে। চুমু খাচ্ছে পিঠে, চুলের বক্রতা সোজা করে দিচ্ছে। ঘৃণায় মেয়েটার শরীর একবার রি রি করে উঠল।
* * *
পিশাচটা তার লজ্জা ঢেকেছে জিন্স প্যান্টটা পরে নিয়ে। মিলা বসে আছে হাঁটুতে মুখ লুকিয়ে, মেঝেতে। পিশাচটার ফেলে দেয়া বিশ্রী ভঙ্গি থেকে এই অবস্থায় আসতে সময় নিয়েছে কম করেও আধঘন্টা। কারন আর কিছুই না – এক তো জ্ঞানশূন্যতা কি করবে এরপর, আর হল শারীরিক অক্ষমতা। প্রতিটা ছোট অঙ্গ সঞ্চালন যেন তার শিরা উপশিরাগুলো ছিঁড়ে নিচ্ছে।
ধর্ষকটা এগিয়ে এলো। হাঁটু গেঁড়ে বসে মাথায় হাত রাখল মিলার। “সোনা, উঠো। জামা কাপড় পড়ে নাও”।
খুব আশ্চর্য হলেও সত্যি, মিলা উঠল। যদিও সে জন্য সমস্ত শক্তি ব্যয় করতে হয়েছে। ব্যাথায় কুঁচকে গেল চোখমুখ। কয়েক ফোঁটা রক্ত পড়ল মেঝেতে, যেখানে আরো কিছু রক্ত একটু আগেই প্রবাহিত হয়েছিল। টলতে টলতে গেল কাঁচের ঘরটার দিকে। নিজের ভেজা কাপড়গুলো গায়ে দিল। চোখ মুখে শুকিয়ে যাওয়া কান্নার আগ কালি হয়ে গেছে, আলু থালু চুল। সেগুলো ঠিক করতে গেলনা। বাইরে বেড়িয়ে অবশিষ্ট বৃষ্টিতে ভিজবে, বৃষ্টি কান্নার জল ধুয়ে নিয়ে যাবে। ঈশ্বর! যেন কষ্টও সে বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়।
* * *
পিশাচটা চেয়ারে বসে আছে, হাঁটুতে কনুই রেখে কপালে হাত। হাহ্j, অসময়ের অনুশোচনা…। মিলার ঘৃণা একশ’ গুন বেড়ে গেল। সে চলে যাচ্ছে। দরজার আগ মূহূর্তে কি মনে করে থামল।
“একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করে শুধুমাত্র নিরাপত্তার আশায়” ক্ষীনকন্ঠে বলতে লাগল সে “আমার নিরাপত্তা ছিল তোমার দায়িত্ব। মেয়েরা ভরসা করে এমন একজনকে যে সেই মেয়েটাকে সম্মান দিতে জানে। হয়তো আমি তোমার প্রেমিকা ছিলাম। কিন্তু তাই বলে আমার সম্মান তোমার খেলার জিনিস হয়ে যায়নি, তোমার তাতে এক ফোঁটাও অধিকার ছিলনা। তুমি ঐ ভাঙা কাঁচটার মতই আমার সম্মানকে ভেঙে ফেললে, যা আর কোনদিনই জোড়া লাগানো যাবেনা। আমি তোমাকে কিছু বলবনা। আমি চাই তোমার কখনো যেন প্রায়শ্চিত্ত না হয়, বরং তোমার উপর অভিশাপ পড়ুক। থুঃ…”
* * *
মিলা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চলে গেল। অন্তু নামের ধর্ষক কাঁচের দিকে তাকিয়ে রইল।
পাড়ার ছেলেগুলো আসার সময় আবার ডিসটার্ব করছে না তো? ধুর! এমন তো কখনো হয়না। আগেও কত এসেছে না মিলা এই জায়গাটায়। প্রতিদিনই ১৫ মিনিট থেকে আধ ঘন্টা দেরী করেছে, কিন্তু আজকের মত এতো নয়। মিলার উপর চড়াও মেজাজটা এখন বরং চিন্তিতই হয়ে যাচ্ছে। অন্তু এখন বসে আছে তার দোকানে। চাকরী খোঁজার পাশাপাশি এই কম্পিউটার এক্সেসরিজের দোকানটা চালায় সে। শুক্রবার দোকান বন্ধের দিন। কিন্তু অনেক শুক্রবারেই সে এটা খোলে, শুধু নিজে আসে। বাইরের ঝাঁপিগুলো বন্ধ থাকে, ছোট্ট একটা গেট ছাড়া। মিলা সেখান দিয়ে ঢুকেই একটা ভুবন ভুলানো হাসি দেয়, যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু আজ হাসিতে ভুললে চলবেনা। কঠিন একটা ঝারি দিতে হবে।
খুট করে শব্দ হল। কাকভেজা একটা মেয়ে ঢুকল, তার হাতে কিছু ফুল। অন্তুর দিকে তাকিয়ে সেই হাসিটা দিল সে।
- থামো, এতো দেরি হল কেন তোমার?
- আমার কি দোষ? বাইরে এত বৃষ্টি! তোমার জন্য ফুল কিনতে নামলাম, তখনি বৃষ্টি এলো। এরপর কতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম… একটা রিকশা, সি এন জি কিচ্ছু পাইনা, তো?
- এদিকে আমি চিন্তা করতে করতে অস্থির…
- আমি কি করব বলো?
- আমি কি করব মানে? তোমার ফোন বন্ধ ছিল কেন?
- আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই বন্ধ…
অন্তু একটা ধমক দিল। মিলা চুপ মেরে গেল।
- প্লিজ, মাইন্ড করোনা। আমি তো চলেই এসেছি। কত কষ্ট করে তোমার জন্য বৃষ্টির মধ্যে আসলাম।
- তুমি কখনো কথা দিয়ে কথা রাখোনা। অপেক্ষা করিয়ে রেখে মজা পাও। কাল রাতে কত কথা শুনালাম, কোন চেঞ্জ নাই।
কাল রাতে ওদের মধ্যে বেশ ঝগড়া হয়েছে। কাজেই আজকের দিনটা একটু ক্রুশাল ছিল। শেষ পর্যন্ত ঝগড়া দিয়েই শুরু হল।
“অন্তু, মাইন্ড করোনা প্লিজ” বলতে বলতে এগিয়ে এলো। “আচ্ছা, ঠিক আছে। আমাকে একটা থাপ্পড় দিয়ে দাও।”
“তুমি এখনো ফাজলামি করছ।”
মিলা এসে অন্তুর ঘাড়ে হাত রাখল, পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে চুমু খেল ঠোঁটে। “স্যার, মাফ করে দেন স্যার। আমার ভুল হয়ে গেছে, আমাকে একটা থাপ্পড় দেন।”
মিলার গায়ে একটা গন্ধ আছে, যেটা কেবলই অন্তু পায়। সেই গন্ধটা খুব প্রকট লাগল। অন্তুর ধারণা সে চোখ বন্ধ করে থাকলেও যদি মিলা আশে পাশে থাকে তাহলে এই গন্ধ থেকে জেনে যেবে যে মেয়েটা কাছেই আছে। মিলা চোখে চোখে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। “আমার ঠান্ডা লেগে যাবে। তোমার শার্টটা দাও।” বলে সেই বোতাম খোলা শুরু করে দিল। মুখে দুষ্টুমি হাসি। মেয়েটা অন্তুকে ভালবাসার চেয়ে মায়ায় বেশী জড়িয়ে রেখেছে। এখনি মায়াবোধটা বাড়ল। ইচ্ছে করছিল চেপে ধরে জোরসে একটা চুমু দেয়। কিন্তু আগে কোনদিন করেনি এবং এইমাত্র ঘটে যাওয়া ছোট্ট অভিমানের কারনে করা গেলনা।
গা থেকে শার্টটা খুলে নিয়ে কাঁধব্যাগটা টেবিলে রাখল, ফুলটা রাখলনা।
এই দোকানের কোনায় পুরোটাই কাঁচে ঘেরা একটা ছোট্ট রুম আছে, যেখানে কম্পিউটার মেরামত করা হয়। সেদিকে এগোল সে। “উলটো ঘুরে থাক। তাকাবেনা কিন্তু।”
অন্তু মনে হল বুঝতে পারেনি কিছু, হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকল। “কি হল?” তাড়া দিল মিলা, “ওদিকে ফিরো। এদিকে তাকালে কিন্তু আম্মুকে ডাকব, হ্যাঁ?”
এবার কিছুটা বুঝতে পারল। ঘুরল ছেলেটা। মিলা কাঁচের ঘরে ঢুকে দরজা আটকাল। সবই কাঁচের, সব বাইরে থেকে দেখা যায়। মিলা পুলিশের মত সন্তর্পন চোখে অন্তুকে খেয়াল রাখছে। একে একে কাপড় ছাড়তে শুরু করল মিলা। ভিজে থাকা কাপড় শরীর কামড়ে আছে, ছাড়িয়ে নেবার সময় ছড় ছড় আওয়াজ করছে।
অন্তুর কাছে মূহূর্তগুলো দীর্ঘতর ঠেকল। কোন মেয়ে যদি নগ্ন হতে থাকে, আর পুরুষটাকে বলে চেয়োনা; কোনসে পুরুষ আছে পারবে? অন্তত নিজেকে সেরকম ঠেকলনা অন্তুর। এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনে ফিরল সে, কাঁচের ছোট্ট বাড়িটার দিকে। মিলা তখন পাজামাটা খুলে পা থেকে সরিয়ে কেবল ঝোঁকে থাকা থেকে উঠছে। উঠে চোখ পড়তেই চমকে উঠল। “আম্মু…” বলে চিৎকার দিয়ে টেবিলে রাখা ফুলটা নিয়ে যৌনাঙ্গটা ঢাকল, আরেক হাতে স্তনদুটো ঢাকার চেষ্টা করল।
এখন পৃথিবীটা কেবলই স্থির। অন্তুর দেহে পেন্সিল ব্যাটারীর মত মৃদু একটু প্রাণ আছে যেন। সেই মৃদু সত্ত্বা দিয়ে অনুভব করল তার সামনে একটা নগ্ন নারীদেহ, যার যৌনাঙ্গ ফুল দিয়ে আবৃত, বুকের লজ্জা ঢাকার ব্যার্থ চেষ্টায় ব্যাস্ত একটা পূজ্য কুমারী। সময় খুবই ধীর, কুমারী কিছু উচ্চস্বরে বলে চলেছে। মৃদুপ্রান নিয়ে তা কি উপলব্ধি করা যায়? একটা কথাও কানে যাচ্ছেনা অন্তুর। কখন যে কাঁচের বাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল কার প্রেরনায় কিছুই বলতে পারবেনা। বদ্ধ কাঁচের ঘরে শ্বাসজীবী প্রানী ছেড়ে দিলে কিছুক্ষন পর যেমন শ্বাসকষ্টে দেয়ালের গায়ে সেঁটে যায় বাইরের বায়ুমন্ডিত জগৎটাকে পাবার আশায়, অন্তু ঠিক তাই করছিল। মিলা উল্টো ঘুরেছে, দৃশ্য পুনস্থাপিত করার আশায় দেয়াল ঘষটে অন্তুও চলে এলো অন্য পাশে। মিলা অবশেষে ফুল ছুঁড়ে মারল।
সম্বিৎ ফিরে আসল ঝাড়া দিয়ে। “মিলা একটু ঢুকতে দাও।”
‘না, কি বল?’ একবার ফুঁপিয়ে আবার সাহায্যের আশায় ডাকল, ‘আম্মু…’
- কিছু করবনা, একবার শুধু ঢুকতে দাও।
- না, পাগল হয়ে গেছ? যাও এখান থেকে।
- যাবনা। …ঢুকতে দিবেনা?
- না!
এবার জোরে চিৎকার দিল মিলা। গা থেকে হাত সরিয়ে শার্টটা ঝটপট পড়তে চেষ্টা করল। কিন্তু পারছেনা, সে কাঁপছে।
- আমি কিন্তু গ্লাস ভেঙে ফেলব।
মিলা মেয়েলী ফুঁপানো শুরু করল। “খোল, নাহলে কিন্তু আমি সত্যি তাই করব।” অন্তু হুমকি দিল। উত্তরে মিলা বোকা মেয়ের মত জিজ্ঞেস করল “কেন?”
এর উত্তর কি আসলেই অন্তু জানে? না। তাহলে কেন এমন করছে? দুঃখিত, এই বিবেক কিন্তু অন্তুর মাঝে কাজ করলনা। সে ভাবল, কাঁচটা কিভাবে ভাঙা যায়। একটা পেপারওয়েট দেখতে পেল সে নিজের টেবিলের উপরে। নিয়ে এসে আরেকবার হুমকির পুনরাবৃত্তি করল। মিলাও তার সিদ্ধান্তে অনড়। কাজেই অন্তু একটু দূর থেকে পেপারওয়েট মেরে কাঁচটা ঝন ঝন শব্দে ভেঙে ফেলল। পেপারওয়েটটা কাঁচ ভাঙার কাজ সেরে মিলার খুব কাছে গিয়ে আঘাত করল, ভয় লেগেছে মেয়েটার। সেটা থেকে দৃষ্টি সরাতেই দেখল অন্তু এগিয়ে আসছে, তবে অন্যদিনের অন্তু নয়। এর মাঝে যেন একটা দানব দেখতে পাচ্ছে সে। যদিও মেনে নিতে ইচ্ছে হলনা, হয়তো কিছুক্ষন খুনসুটি করবে…
কিন্তু না, অন্তুর চোয়াল দেখি ক্রমেই জোরাল হচ্ছে। মিলার অন্তরে ভয় ঢুকে গেল এবার। সে পেছনে আরো চেপে গেল, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। শার্টটা সে অর্ধেক পড়তে পেরেছিল, সেটাই যেন এখন অবলম্বন। ভয়ে মেয়েটা ম্লান হয়ে শার্টটাকেই আঁকড়ে ধরল।
অন্তু এসেই খপ করে হাত দুট ধরে ফেলল। উঁচিয়ে নিয়ে সেগুলোও দেয়ালের সাথে সেঁটে দিল। এবার তার ঠোঁটগুলো এগিয়ে আসছে। মিলা থরথর করে কাঁপছে। কথা বেরুচ্ছেনা, মৃদু শব্দে কিছু বলছে সে। কে জানে হয়তো অন্তুকে থামতে বলছে অথবা প্রার্থনা করছে। অন্তু মিলার ঠোঁটে ঠোঁট মেলাল। স্বভাবতই সে ঠোঁটে সারা নেই। এমনিতে মিলার ঠোঁটদুটো সবসময়ই ভিজে থাকে, চিক চিক করে। হাসলে যেন সকাল ভেঙে আসে। কিছুক্ষন আগে সেই ঠোঁট থেকে প্রান চলে গেছে।
ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করছে, কিন্তু একটা দানবে রূপ নেয়া পুরুষের কাছে কি নম্র কোন কুমারী পারে? নানা সময়ে দেয়া অন্তুর নামগুলো ধরে মিলা অনুনয় শুরু করল। “আমার লক্ষী ছেলে, আমার রাখাল ছেলে, সোনা, প্লিজ ছাড়ো আমাকে। প্লিজ…” মেয়েটা তার আত্মসম্মানের সর্বনিম্নে চলে এসেছে তবুও অন্তুর বিকার নেই। এতো নিচে একটা মেয়ের আত্মসম্মান নামতে দেয়া দুর্বৃত্তেরও সাজেনা।
মিলা চুমুতে একটু সাড়া দিয়ে আবার অনুনয় করে চেষ্টা করল। কাজ হলনা। অন্তু কিছু শুনছে বলে মনে হলনা। মিলা এই পৃথিবীতে চরম অসহায় আর দুর্ভাগা জ্ঞান করল নিজেকে। চোখ ফেটে পানি বেড়িয়ে এলো তার। নীরব কান্না যা মেয়েরা কদাচিৎ কাঁদে।
গায়ের জোর একত্র করেও আর সে পারছেনা। মিলার ঘাড়ে যখন অন্তু চুমু খাচ্ছে, মূহূর্তের জন্য ডানহাতটা ছাড়ল সে। সে সুযোগেই অসহায়িনী একটা জোর থাপ্পড় বসিয়ে দিল। ব্যাঘ্রস্বরূপ ছেলেটা আরো ক্ষেপে গিয়ে দ্বিগুন জোরসে ঠেসে ধরল।
বুক দিয়ে চেপে রেখে হাত মুক্ত করে মেয়েটার যোনিবন্ধনী খুলে ফেলল সে, ছুঁড়ে ফেলল দূরে। মেয়েটার সমস্ত শরীরে বিপরীতার্থক প্রতিক্রিয়া। নিঃশব্দ কান্না অসহায়ত্বের সঙ্গী হলনা, কেবল বাড়িয়ে দিল আরো। এমন প্রেষণাময় মূহূর্তে অনুভব করল পুরুষ সঙ্গীর শক্ত যৌনাঙ্গ। পথ খুঁজে নিচ্ছে মিলার দেহে। “এ অন্যায়!” ভাবল মিলা, ভাবনাটা তার মনে বার বার প্রতিধ্বনিত হয়ে বাজতে লাগে – এ অন্যায়, এ অন্যায়… একটা মেয়ের অধিকার আছে যৌনক্রিয়ার পূর্বে উত্তেজিত হয়ে নেবার, সে দায়িত্ব সঙ্গীর। অবশ্য বলাই বাহুল্য, মিলার বহু পরিচিত সেই সঙ্গী আর সঙ্গী নয়; এ এক ধর্ষক!
সশব্দে কেঁদে উঠল মেয়েটা, অন্তুর পুরুষত্ব জোরপূর্বক পথ খুজে নিয়েছে। একটা মেয়ের কাছে এটা খুবই কাম্য, কিন্তু তাতে থাকতে হয় অগাধ ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর আদর। একটা ধর্ষকের কাছে এসবের কোন মূল্য নেই, মানে নেই। মিলার কান্না আর্তচিৎকারে পৌঁছুল। কেউ নেই উদ্ধার করার, ধর্ষকের ভেতরের বিবেকটাও ঘুমিয়ে আছে।
ধর্ষকের কাঁধে প্রচন্ড জোরে কামড় বসাল অসহায়িনী। চিৎকার দিয়ে সরে গেল পিশাচটা। পরমূহূর্তেই ছুটে এলো। চুল ধরে খুব বিশ্রীভাবে হেঁচরে মেঝেতে ফেলল। কপাল ঠুকে যাওয়ায় ব্যাথা পেয়েছে মিলা। উপুর হয়ে পড়েছে। ব্যাথার আক্রমনে ছুটে যাওয়া দমটা ফিরে পেতেই শরীরের উপর এসে পড়ল পিশাচ। এবার আরো বেকায়দায় চেপে ধরল মেঝেতে, মিলার একবিন্দু নড়ার ক্ষমতা নেই। ফুটন্ত কড়াই থেকে ছিটে জ্বলন্ত উনুনে পড়ল যেন।
আবার প্রচন্ড ব্যাথাময় প্রবেশ অনুভব করল মেয়েটা। গলা ফেড়ে আওয়াজ বের হতে যাচ্ছিল, দানবটা তার লোমশ হাত মুখের উপর চেপে ধরল। এমন একটা অবস্থায় পড়ার আগে মেয়েদের মৃত্যুই কাম্য। কিন্তু এত কাঙ্ক্ষিত মৃত্যু নিশ্চই আসবেনা। পুরনো কোন পাপের প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে নিশ্চয়ই। নাকি সবই তার নিজের ভুলে?
* * *
তার ছোট্ট শরীরটার উপর দিয়ে ঝড়- ঝাপটা যখন থেমেছে তখন বাইরেও বৃষ্টি থেমেছে। মিলার গায়ে কোন জোর নেই, নিথর পড়ে আছে। কোন অনুভূতি নেই, বেঁচে থাকার তাগিদ নেই। আছে এক ধরনের জড়তা, আর আছে তার দেহের উপর নিঃসার এক ধর্ষক। যে কিনা আমেজ লাভ করে এখন খুব আদর দেখাচ্ছে। চুমু খাচ্ছে পিঠে, চুলের বক্রতা সোজা করে দিচ্ছে। ঘৃণায় মেয়েটার শরীর একবার রি রি করে উঠল।
* * *
পিশাচটা তার লজ্জা ঢেকেছে জিন্স প্যান্টটা পরে নিয়ে। মিলা বসে আছে হাঁটুতে মুখ লুকিয়ে, মেঝেতে। পিশাচটার ফেলে দেয়া বিশ্রী ভঙ্গি থেকে এই অবস্থায় আসতে সময় নিয়েছে কম করেও আধঘন্টা। কারন আর কিছুই না – এক তো জ্ঞানশূন্যতা কি করবে এরপর, আর হল শারীরিক অক্ষমতা। প্রতিটা ছোট অঙ্গ সঞ্চালন যেন তার শিরা উপশিরাগুলো ছিঁড়ে নিচ্ছে।
ধর্ষকটা এগিয়ে এলো। হাঁটু গেঁড়ে বসে মাথায় হাত রাখল মিলার। “সোনা, উঠো। জামা কাপড় পড়ে নাও”।
খুব আশ্চর্য হলেও সত্যি, মিলা উঠল। যদিও সে জন্য সমস্ত শক্তি ব্যয় করতে হয়েছে। ব্যাথায় কুঁচকে গেল চোখমুখ। কয়েক ফোঁটা রক্ত পড়ল মেঝেতে, যেখানে আরো কিছু রক্ত একটু আগেই প্রবাহিত হয়েছিল। টলতে টলতে গেল কাঁচের ঘরটার দিকে। নিজের ভেজা কাপড়গুলো গায়ে দিল। চোখ মুখে শুকিয়ে যাওয়া কান্নার আগ কালি হয়ে গেছে, আলু থালু চুল। সেগুলো ঠিক করতে গেলনা। বাইরে বেড়িয়ে অবশিষ্ট বৃষ্টিতে ভিজবে, বৃষ্টি কান্নার জল ধুয়ে নিয়ে যাবে। ঈশ্বর! যেন কষ্টও সে বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়।
* * *
পিশাচটা চেয়ারে বসে আছে, হাঁটুতে কনুই রেখে কপালে হাত। হাহ্j, অসময়ের অনুশোচনা…। মিলার ঘৃণা একশ’ গুন বেড়ে গেল। সে চলে যাচ্ছে। দরজার আগ মূহূর্তে কি মনে করে থামল।
“একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করে শুধুমাত্র নিরাপত্তার আশায়” ক্ষীনকন্ঠে বলতে লাগল সে “আমার নিরাপত্তা ছিল তোমার দায়িত্ব। মেয়েরা ভরসা করে এমন একজনকে যে সেই মেয়েটাকে সম্মান দিতে জানে। হয়তো আমি তোমার প্রেমিকা ছিলাম। কিন্তু তাই বলে আমার সম্মান তোমার খেলার জিনিস হয়ে যায়নি, তোমার তাতে এক ফোঁটাও অধিকার ছিলনা। তুমি ঐ ভাঙা কাঁচটার মতই আমার সম্মানকে ভেঙে ফেললে, যা আর কোনদিনই জোড়া লাগানো যাবেনা। আমি তোমাকে কিছু বলবনা। আমি চাই তোমার কখনো যেন প্রায়শ্চিত্ত না হয়, বরং তোমার উপর অভিশাপ পড়ুক। থুঃ…”
* * *
মিলা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চলে গেল। অন্তু নামের ধর্ষক কাঁচের দিকে তাকিয়ে রইল।
No comments:
Post a Comment