Sunday, April 1, 2012

সাদের বাসর

ভাইরে, আপনি যতই সুপুরুষ হোন, যতই কুংফু কারাতে জানা থাকুক, যত টাকা বেতনই পান বিবাহের প্রথম রাত অর্থাৎ বাসর ঘরে কুপোকাত হইবেন না তাহা কোনোদিনও জোর দিয়া বলা যাইবেনা! ভাইরে, শত লজ্জা ভাংগিয়া আমি আজ আমার সেই করুন কাহিনী শোনাইবো।
ভাইরে, সে অনেকদিন আগের কথা। সে আমলে আমদের কোনো বান্ধবী ছিলোনা। তাহা ছাড়া আমি একটু লাজুক প্রকৃতির হওয়ায় কোনো নারীর সংস্পর্শ তো দূরে থাক এমনকি ভালো করিয়া কোনোদিন কথাও বলি নাই। এমন সময় আমি বসিলাম বিবাহের পিঁড়িতে! এই পিঁড়িতে মানে প্রেম পিরিতি নহে রে ভাই, প্রেম পিরিতি নহে!!
ক্যাডেট কলেজে থাকা কালিন সময়ে প্রতি সপ্তাহে অডিটরিয়ামে একটি করিয়া বাংলা সিনেমা দেখা বাধ্যতামূলক ছিলো। কলেজের ৬ বৎসর কাল প্রতি সপ্তাহে বাংলা সিনেমা দেখিতে দেখিতে সব কিছু মুখস্ত হইয়া গিয়াছিলো। ঐখান হইতেই বাসর রাত সম্বন্ধে আমার ধারনা জন্মে। আমার নিজের বাসর রাত ক্যামন হইবে তাহা সিনেমা দেখিয়া কল্পনা করি্যা লইয়াছিলাম। নিজের বিবাহের কথা বার্তা চলাকালিন সময়েই মাথার মধ্যে বাংলা সিনেমার ঢং এ বাসর রাতে কি করিব তাহার একটা চোথা রেডী করিয়া মুখস্ত করিলাম এবং খান কয়েকবার প্র্যাকটিসও করিলাম। বাংলা সিনেমার আদলে গড়া আমার বাসর রাতের মহড়া নিম্নরুপ:
নতুন বউ লাল শাড়ীতে বিছানায় অবনত দৃস্টিতে বসিয়া আছে। বর বীরবেশে কক্ষে ঢুকিয়া দরজার খিরকি আটকাইয়া দিল। আস্তে আস্তে সে বিছানায় বসিয়া নতুন বউ এর ঘোমটা তুলিয়া অবাক কন্ঠে বলিল “বাহ, তোমাকে পরীর মত লাগছে!” নতুন বউ তখন লজ্জায় আড়স্ট হইয়া বলিবে “আপনি, বেশী বেশী বলেন!” বর তখন গদ গদ হইয়া বলিবে “আমাকে এখন থেকে তুমি করেই বল!” বর অতঃপর জিগ্গাস করিবে “আমি তোমার কি হই?” বউ লজ্জায় বলিবে “হাজবেন্ড!” বর তখন আদর করিতে গেলে নতুন বউ আরো লজ্জা পাইয়া বিছানা হইতে নামিয়া বর এর পা ছুঁইয়া কদমবুচি করিয়া বলিবে “স্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেশত!” জামাই আদর করিয়া বউ কে পা হইতে তুলিয়া বুকে টানিয়া সোহাগ করিয়া বলিবে “তোমার স্হান পা’য়ে নয়, তোমার জায়গা বুকে!”
যাহা হউক, এই চোথাটা মনের মধ্যে গাঁথিয়া লইলাম!
অবশেষে আসিল সেই মাহেন্দ্রক্ষন! আমার বাসর রাত!!
আমি দরজা ঠেলিয়া ঢুকিতেই দেখি আমার সদ্য বিবাহ করা বউ বিছানার উপরে লাল শাড়িতে ঘোমটা দিয়া বসিয়া আছে! যাক! চোথার সাথে মিলিয়া গেলো বলিয়া আশ্বস্হ হইলাম!
আস্তে আস্তে আগাইয়া গিয়া বিছানায় বসিলাম। আমি তখন নব্য যৌবনের টানে দিশাহারা! যাহা হউক, উনার ঘোমটা সরাইলাম। কিন্তু বিধিবাম!! কোনো কথা বলিতে পারিলাম না! কয়েক সেকেন্ড পরে উনিই প্রথম বলিয়া উঠিলেন:
বউ: অমন ড্যাব ড্যাব করে কি দেখছো?
(হায় বিধি! প্রথমেই আপনি র বদলে তুমি??? আমার চোথার সাথে একদম সাংঘার্ষিক ব্যাপার! এখন কি করি? আমার মাথা গেলো গুলাইয়া!)

আমি: ইয়ে মানে…!
বউ: এই শোনো, পা’য়ে ব্যাথা করছে। নূপুর টা একটু খুলে দাওনা!
(হায়! হায়! চোথা অনুযায়ী বউ আমার পা ধরিবার কথা! এখন দেখি আমি নিজেই বউ এর পা ধরিতে যাইতেছি! ভাবিলাম এখন কলিকাল কিনা। মনে হয় এখন স্ত্রীর পায়ের নীচেই স্বামী বেচারার বেহেশত!) যাহা হউক কম্পিত হস্তে নূপুর খুলিলাম। আমার টখন ত্রাহী ত্রাহী অবস্হা!

যা হউক যতোটুকু সাহস অবশিস্ট ছিলো তাহা একত্রে যোগাড় করিয়া বলিলাম “এই শোনো, আমি তোমার কি হই?”
উত্তরে যা শুনিলাম তাতে আমার সদ্য প্রস্ফুটিত যৌবন শুকাইয়া গেলো।
বউ বলিল ” আচ্ছা শোনো, আমরা প্রথমে কয়দিন ফ্রেন্ড এর মতো থাকি, ক্যামন? পরে না হয়…!!!”
মানে কি? মানে কি? হইতে আসিলাম স্বামী, হইয়া গেলাম ফ্রেন্ড?!!! এর মর্মার্থ আমার আর বুঝিবার বাকী রহিল না! আমার কামনার আগুন তখন লেলিহান শিখায় রুপ নিয়াছে! বউ এমন প্রস্তাবে উক্ত শিখায় যেনো বরফ ঢালা হইল…আমার এতো সাধের মুখস্ত করা চোথা কোথায় যে উবিয়া গেলো তাহা জানিলাম না!
এরপর যমুনায় অনকে জল গড়াইয়াছে। কোনো একসময় অবশ্য ফ্রেন্ড হইতে স্বামীতে পদোন্নতী পাইয়াছি!কিনতু এখনো সেই রাতের কথা ভাবিলে মন (এবং শরীর) ক্যামন যেনো করিয়া উঠে ভাইরে!

No comments:

Post a Comment